বিবর্তনের সেকাল ও একাল খণ্ডন ও বিজ্ঞান দূষণ!


‘খোলা জায়গায় মাংস রেখে দিলে কিছুদিন পর সেই মাংস স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোকায় পরিণত হয়’-এরিস্টটলের এই পর্যবেক্ষণ পৃথিবীবাসীকে 2000 বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাসী করে রেখেছিল। যাই হোক,এই পর্যবেক্ষণ দ্বারা তার আবিষ্কৃত Spontaneous Generation তত্ত্ব সপ্তদশ শতাব্ধিতে এসে ডাস্টবিনে স্থান পায়।

অবশ্য এই Spontaneous Generation তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত প্রায় টিকেই গিয়েছিল যখন বৃটিশ বিজ্ঞানী জন নিডহাম একটি কাচ পাত্রে জড় উপাদান থেকেই ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে দেখান। এ অভাবনীয় আবিষ্কারে মুগ্ধ হয়ে তাকে ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয়। কিন্তু এতে বাগড়া দেন খুঁতখুঁতে স্বভাবের আরেক ইটালিয়ান বিজ্ঞানী লেজারো স্পেল্যানজানি। তিনি বললেন, আগে থেকেই কাচপাত্রের বাতাসের মধ্যে অণুজীব বিদ্যমান ছিল। তিনি নিজে অনুরূপ যন্ত্র বানিয়ে কাচপাত্রটির জড় উপাদানগুলোকে ভালভাবে সিদ্ধ করে ওখান থেকে সব বাতাস বের করে দিয়ে ছিপি আটকিয়ে রেখে দেন। কিন্তু হায়! মাসের পর মাস গেল অথচ কোন ব্যাকটেরিয়া সেখানে জন্মাল না। এবার রয়েল সোসাইটির সদস্যরা অভিযোগ তুলল যে, প্রাণ সৃষ্টির অন্যতম উপাদান বায়ু চলাচল ছিল না বলে সেখানে কোন প্রাণের সৃষ্টি হয় নি। আরও 100 বছর চলল প্রাণ সৃষ্টির এ বিতর্ক। অবশেষে এ বাক-বিতণ্ডার ইতি টানলেন মহান বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর। তিনি কাচপাত্রটির মুখে একটি সোয়ান নেক আকৃতির বিশেষ ধরনের সরু কাচনল লাগিয়ে দেন যাতে সেখানে বায়ু ঢুকতে পারে কিন্তু অণুজীব সরু নলে আটকে পড়ে পাত্রে যেতে না পারে। ফলাফল হল এবারও সেখানে কোন ব্যাকটেরিয়া জন্মাল না। ইউরোপ সমাজে মুখ থুবড়ে পড়ল বৃটিশ বিজ্ঞানীর আবিষ্কার। 

তাই বলে প্রাণ কী ভাবে সৃষ্টি হল তা জানতে গবেষকরা হাল ছেড়ে দেন নি। উৎসুক মানুষ চেষ্টা করে যেতে থাকল,যে প্রাণটির ধাপে ধাপে লক্ষ বছর ধরে উন্নতির ফলে আজকের জীবজগত বিকশিত হল সেই প্রাণটি কীভাবে সৃষ্টি হল? বিজ্ঞানী বার্জেলিয়াসের ছাত্র ফ্রেডরিখ ভোলার ল্যাবে ইউরিয়া উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল জৈব যৌগ কেবল ও কেবল মাত্র জীবদেহেই উৎপন্ন হয়। সুতরাং ল্যাবে জৈব যৌগ (ইউরিয়া একটি জৈব যৌগ) তৈরি করে ফেলা মানে স্বয়ং জীব তথা প্রাণ উৎপন্ন করার কাছাকাছি একটা ব্যপার! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল-তারা জানতেনই না যে,প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন জীবদেহ ছাড়াই বজ্রপাতের প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ইউরিয়া উৎপন্ন হয় (আর এ জন্য, যে বছর বজ্রপাত বেশি হয় সে বার ফলনও ভাল হয়)। আরও সহজভাবে বললে জীবদেহে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয় আবার প্রাকৃতিক পরিবেশেও পানি উৎপন্ন হয় সুতরাং কেউ যদি ল্যাবে পানি উৎপাদন করে তার মানেই প্রাণের উৎপাদনের কাছাকাছি কোন ব্যপার নয়। যাই হোক তাদেরকে ধন্যবাদ বিজ্ঞানে কিছু যোগ করার জন্য।

‘আজকের জীবজগত গঠিত হয়েছে একটি আদি অতি ক্ষুদ্র জীবের উন্নতির ফলে’-এমন তত্ত্ব দিয়ে বিজ্ঞান জগতে হৈ-চৈ ফেলে দিলেন বিজ্ঞানী ডারউইন। কৌতুহলপ্রিয় ও অনুসন্ধানী মানুষের জন্য আজ অবধি এটার যৌক্তিকতা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। সহজ ভাষায় বিবর্তন হল, অকোষীয় বস্তু অথবা এককোষী একটা অণুজীব থেকে পর্যায়ক্রমে আজকের বিশাল জীবজগৎ গড়ে উঠার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, একটা ভাইরাস বা এককোষী ব্যাকটেরিয়া কিভাবে একটা দ্বিকোষী বা বহুকোষী জীবে উন্নীত হল সেটাই বিবর্তন। আর একটা ক্ষুদ্র জীব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি জীব হঠাৎ করেই তৈরি হয়ে যায় না। এদের মাঝে আরও অনেকগুলো মধ্যবর্তী ধাপ তৈরি হয় যাদের মাঝে একটু করে নতুন নতুন পরিবর্তন যোগ হতে হতে অবশেষে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের একটা প্রজাতি তৈরি হয়। পরিবর্তনের এই মধ্যবর্তী ধাপসমূহকে বলা হয় Transitional Form. ধরে নিলাম,এভাবে বহুকোষীতে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় অসংখ্য Transitional Form তৈরি হতে হতে একটা সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের নতুন জীবের উদ্ভব হয়েই যেতে পারে। কিন্তু এভাবে দৈবচয়নিক পরিবর্তনে নতুন ফাংশনাল জিন তৈরি হবার ফলে জীবে নতুন নতুন বৈশিষ্ট যুক্ত হয়ে সবসময় যে অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবের সৃষ্টি (Step Up Process)হবে-এটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক যুক্তি। বরং দৈবচয়নিক জিন বিন্যাশের ফলে, আগের জীবে কার্যকরী এমন কিছু জিন তার কোডিংয়ে পরিবর্তনের ফলে, নন-ফাংশনাল জিনে রূপান্তরিত হয়ে অথবা জিন ডিলিশনের (Gene Deletion) ফলে কিছু ফাংশন হারিয়ে প্যারেন্ট জীব থেকে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত প্রাণীতে (এটাকে Step Down Process) বিবর্তিত হতে পারে। ফলে জিন ডিলিশন প্রক্রিয়ায় একটা উচ্চতর জীব থেকে অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর জীবও তৈরি হতে পারে। ফলে কে যে কার আদিপিতা সেটা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন থেকে গেল!!!

Step Up ও Step Down এই উভয় ধরনের পরিবর্তনসমূহের যুগপৎ চালু থাকাটা কিন্তু মোটেও অসম্ভব নয়। যারা প্রবাবিলিটির (Probability) ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন তারা বুঝতেই পারছেন,পরিবর্তন যেহেতু দু-দিকেই ঘটবে সুতরাং Transitional Form পাওয়ার সম্ভাবনা এবার আগের চেয়ে দ্বিগুন নয় বরং অসংখ্যগুণ বেড়ে গেল। কারণ দুদিকের দুটি বড় সংখ্যা গুণ হবে। ব্যপার যদি এটাই হয় তাহলে আমাদের উচিত পৃথিবীব্যাপী মাটি খুড়াখুড়ি করে Missing Link (বিজ্ঞানের ভাষায় Transitional Form) খোঁজা বাদ দিয়ে এ মূহুর্তে কোন কোন জীবে Transitional Process চলছে সেটি খুঁজে বের করা! তাদের যুক্তি মেনে নিয়ে ধরে নিলাম যে, একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতি তৈরি হতে মিলিয়ন বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ A হতে B-তে বিবর্তনের মাঝে অসংখ্য Transitional Form থাকার কারণে এ দীর্ঘসময় লাগবে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার অতিপ্রথম Transitional Form টি হুট করে তৈরি হয়ে যেতে পারে। উক্ত প্রথম Transitional Form থেকে পরবর্তি Transitional Form টিও হুট করেই তৈরি হবার কথা। কিন্তু যেহেতু ২য় Transitional Form টি সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্ভর করছে ১ম Transitional Form সৃষ্টির উপর, তাই ২য় Transitional Form টি সৃষ্টির সম্ভাবনা আগেরটির চেয়ে কম হবে ।এভাবে অনেকগুলো Transitional Form পাড়ি দিয়ে অবশেষে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের প্রজাতি পাবার সম্ভাবনা অনেক কম। তাই দৈবচয়নিকভাবে নতুন প্রজাতি তৈরি হতে মিলিয়ন বছর সময় লাগতে পারে তাদের এ দাবি মেনে নিলাম। কিন্তু ১ম Transitional Form তৈরি হওয়া একটি স্বাধীন ঘটনা বিধায় এটি হুট করে যে কোন সময় তৈরি হয়ে যেতে পারে, মিলিয়ন বছরও লাগতে পারে আবার এখনও হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান অসংখ্য জীবকূলের সবার ক্ষেত্রেই যে নতুন প্রকরণ সৃষ্টির জন্য ১ম Transitional Form টি তৈরি হতে মিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে ব্যাপারটি মোটেও বিজ্ঞানসমত নয়। দৈবচয়নিকভাবে অন্তত কিছু জীবে এটা এখন ঘটবে। সুতরাং প্রকৃতিতে Transitional Form চলমান থাকতেই হবে। 

অনেকে যুক্তি দেখাবেন যে বিবর্তনের ধারায় জিনের বহুবিধ পুনর্বিন্যাসের ফলে বিশেষ ধরনের জিনবিন্যাস প্রাপ্ত এমন কিছু স্ট্যাবল জীবের সৃষ্টি হয়েছে যাদের মাঝে প্রকরণ সৃষ্টির মত বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেনা এবং এরাই টিকে আছে বাকিরা স্থিতিশীলভাবে টিকে থাকার জন্য দায়ী বিশেষ জিন বিন্যাস দৈবচয়নিকভাবে প্রাপ্ত হয় নি বলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্ট্যাবল জীবগুলো থেকে Transitional Form পাওয়া যাবে না। যাইহোক ধরে নিলাম, Transitional Form গুলো তাদের বিভিন্ন গাঠনিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু যে প্যারেন্ট স্ট্যাবল প্রজাতি হতে Transitional Form-গুলো তৈরি হয়েছিল সেই প্যারেন্ট স্ট্যাবল প্রজাতিগুলো তো আছে। এই প্যারেন্ট স্ট্যাবল প্রজাতিগুলো থেকে অতীতের একসময় যদি Transitional Form গুলো তৈরি হয়েই থাকে তাহলে সে প্রক্রিয়া চলমান থাকছে না কেন? এই স্ট্যাবল প্যারেন্ট প্রজাতিগুলো থেকে অতীতের মত বিবর্তন প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো Transitional Form পার হয়ে প্রকৃতিতে আবার ডাইনসোর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা হয়ত কম,কিন্তু স্ট্যাবল প্রজাতিগুলো থেকে তৈরি হওয়া অতি প্রথম Transitional Form টি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও Randomly মানে হুট করেই সৃষ্টি হবার কথা! কারণ বিবর্তন ধারাবাহিক নয়, একটি Random Process. অর্থাৎ একটির পর একটি এভাবে নয় বরং মেইন স্ট্রিম Step Up ,Step Down প্রক্রিয়া তো বটেই এমনকি এদের অন্তর্বর্তী ধাপ সমূহেরও বহুমুখী Step up ,Step down প্রক্রিয়া Randomly যুগপৎ চলমান থাকবে ।

বিজ্ঞান যাত্রার লেখকেরা আমাদেরকে জার্নাল ঘেটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাজির করলেন যার কয়েকটি হল,মানুষের জিনোমের প্রায় ৮% হচ্ছে প্রাচীন ভাইরাসের ফসিল, এদের বলা হচ্ছে HERV (Human endogenous retroviruses)। সহজভাবে বলতে গেলে এইসব ভাইরাস জিনোমের পুরা কপিটাই মানব জিনোমে ইন্টিগ্রেটেড আছে। এখন পর্যন্ত মানব জিনোমে এরকম বিশটিরও বেশি শ্রেণীর HERV পাওয়া গেছে। আরও ভাবনার ব্যাপার হল মানব জিনোমের বিপুল একটা অংশজুড়ে পুনরাবৃত্তিমূলক সিকোয়েন্স (Interspersed Repetitive Elements) বিদ্যমান। যা কিনা পরজীবীর ফসিল মানে হল পরজীবীর জিনোমটাও আমাদের জিনোমে ইন্টিগ্রেটেড আছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত! মানুষের উৎপত্তি হল এইসব আদিজীবের বিবর্তনের ফসল! 

আসলে ব্যাপার হল, ডাটা আর রেফারেন্স উদ্ধৃত করে হড়বড় কথা বলে ভারিক্কি গদ্যশিল্প অনেকেই রচনা করতে পারে। কিন্তু ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন করার জন্য কিছু জ্ঞান লাগে। বিজ্ঞানযাত্রার লেখকদের ডাটা অ্যানালাইসিসের ধরণ দেখে একটা গল্প মনে পড়ল। বল্টু একটি তেলাপোকার কাছে গিয়ে দু-হাত এক করিয়া এক খানা তালি বাজাইল। তেলাপোকাটি দ্রুতবেগে ছোটা শুরু করিল। বল্টু উহাকে ধরিয়া আনিয়া একখান পা চিড়িয়া ফেলিল। বল্টু আবার তালি বাজাইল। তেলাপোকাটি এবারও দৌড়ানো শুরু করিল কিন্তু বেগ এবার আগের চেয়ে একটু কমিয়া গেল। বল্টু এই পক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করিতে করিতে এক সময় বেচারা তেলাপোকাটি তাহার সকল পা হারাইয়া ফেলিল। বল্টু আবারও তেলাপোকাটির কাছে গিয়া তালি বাজাইল। কিন্তু এইবার বেচারা পা-হারা তেলাপোকাটি আর দৌড়াইতে পারিল না। বল্টু থিসিস লেখিতে বসিল, তেলাপোকার সবগুলা পা চিড়িয়া ফেলিলে সে আর শুনিতে পায় না যার ফলে শব্দ করলেও সে আর পতিক্রিয়া দেখাইতে অর্থাৎ দৌড়াইতে পারে না এবং উহার শ্রবণ হার বিদ্যমান পায়ের সমানুপাতিক!!! বিরাট একটা আবিষ্কার বটে। বিজ্ঞান যাত্রার লেখকদের ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন আর বল্টুর ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন একই ধাঁচের। 

এবার আসুন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে নেচার সময়িকীর ডাটাগুলো অ্যানালাইসিস করি। ভাইরাস থেকে যেহেতু মানুষ পর্যন্ত এই বিশটিরও বেশি শ্রেণীর HERV-এর এই জিনোম কপিগুলো আসতে পেরেছে সেহেতু যে পূর্বপুরুষ থেকে মানুষ আসলো তাদের প্রত্যেকের মাঝেই এই HERV গুলোর অনুরূপ জিনোম কপি থাকতে হবে। পূর্বপুরুষদের কেবল ও কেবল যদি একটি প্রজাতিতেও এই HERV গুলোর জিনোম কপির ঘাটতি থাকে তাহলেও ধরে নিতে হবে এগুলো ভাইরাস থেকে মানবদেহে আসে নি। বরং বিবর্তনের ভাষায়, Random জিন বিন্যাসের ফলেই এগুলো তৈরি হয়েছে যা কাকতালীয়ভাবে ভাইরাসের জিনোমের সাথে মিলে গেছে। অধিকন্তু আদিজীব থেকে যে পরজীবী হয়ে মানুষ পর্যন্ত HERV-গুলো আসলো, সে পরজীবীর জিনোমেও এই HERV-গুলোর জিনোম থাকতে হবে। বিবর্তনের ভাষ্যমতে মানব দেহে যে পুনরাবৃত্তিমূলক সিকোয়েন্স (Interspersed Repetitive Elements) বিদ্যমান সেগুলো হলো পরজীবীর ফসিল(অর্থাৎ পরজীবীর জিনোম)। তাহলে ধরে নেয়া যাক, এই পরজীবী হতেই মানুষের বিকাশ হল। সে ক্ষেত্রে এই HERV গুলো এই পরজীবীর মধ্যদিয়েই মানুষে এসেছে। সুতরাং ওই পরজীবীর জিনোমে (অর্থাৎ পুনরাবৃত্তিমূলক সিকোয়েন্স বা Interspersed Repetitive Elements এর ভেতরে) এই HERV-গুলো অবশ্যিকভাবে থাকবে। এখন বিজ্ঞান-যাত্রার লেখকদের উচিত নেচার সাময়িকীকে প্রশ্ন করা এই বিশটিরও বেশি শ্রেণীর HERV গুলোর অক্ষত জিনোম কপিগুলো মানব জিনোমের পুনরাবৃত্তিমূলক সিকোয়েন্সের (Interspersed Repetitive Elements) ভেতরে আছে কি না ? যাহোক যেহেতু বিজ্ঞান-যাত্রার লেখকেরা বাচ্চাদের মত তথ্য মুখস্ত করা ছাড়া সেটা অ্যানালাইসিস করার কোন যোগ্যতা রাখে না তাই অবলা বাচ্চা মনে করে তথ্যটি তাদেরকে করুনা করে দিয়েই দেই - তথ্যটি হল Interspersed Repetitive Elements -এর ভেতরে এই বিশটির (বা অধিক) প্রত্যেকটি HERV নেই! এটা এটাই প্রমাণ করে যে মানব দেহে জিন কোডিং-এ স্বতঃস্ফূর্ত বিন্যাশের ফলেই তথাকথিত HERV জিনোমগুলো তৈরি হয়েছে। যা কাকতালীয়ভাবেই ভাইরাস জিনোমের প্রতিরূপের সাথে মিলে গেছে। কোনোক্রমেই এগুলো ভাইরাসের ইনহেরিটেন্স নয়। যাহোক ক্লাস 4-5 এর কুইজ প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ তথ্যশিকারী শিক্ষার্থীর মত বিজ্ঞানযাত্রার এই লেখক তথ্যগুলো কী ফলাফল দেয় সেটা নিজে অনুধাবন না করতে পারলেও আমাদেরকে কপি পেস্ট করে জানিয়েছেন বলে উনাকে একটা ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করলাম না। তবে বেশ বুঝা যাচ্ছে, যেভাবে ফুটপাতের হার্বাল বিক্রেতারা একটু বেশি বিক্রির আশায় তাদের মহৌষধটি অতীব বৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরির দাবি করেন ঠিক একইভাবে বিজ্ঞানযাত্রার লেখকেরাও তথ্য-উপাত্তের গবেটমার্কা একটা ইন্টারপ্রিটেশন করে তার সাথে একটুখানি বিজ্ঞান গুলিয়ে মিশিয়ে দিয়ে রম্যরচনা তৈরি করে আম-জনতার কাছে সেটার একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবার অভ্যাসটি ভালই রপ্ত করে ফেলেছে। 

টেকনিক্যাল টার্ম যথাসম্ভব পরিহার করে খুবসহজ ভাষায় বলতে গেলে,DNA আসলে A,G,C ও T এর একটা লম্বা সিকুয়েন্সমাত্র। যে সিকুয়েন্সের বিশেষ বিশেষ অংশ(কোডন) বিশেষ কাজ করতে পারে। সুতরাং উচ্চশ্রেণীর জীবে অগণিত ফাংশনের জন্য তাদের DNA-এ তে অসংখ্য কোড থাকা খুবই স্বাভাবিক। অপরদিকে মাত্র গুটি কয়েক ফাংশনসংবলিত নিম্নশ্রেণীর প্রতিনিধি ভাইরাসে সীমিত সংখ্যক কোড থাকবে। আবারও খুব সহজভাবে রিপিট করছি, ভাইরাস তুলনামূলকভাবে অতিসরল DNA (বা RNA) এর মধ্যস্থ অতিসরল কিছু কোডবিশেষ ছাড়া আর কিছুই নয় (যেহেতু প্রোটিন এনভেলপ ছাড়া শুধু জিনোম নিয়েও ভাইরাস দিব্যি টিকে থাকতে পারে যদিও এদেরকে আমরা অন্য নামে ডাকি)। অগণিত ফাংশনের জন্য যেহেতু উচ্চ শ্রেণীর জীবে ব্যাপক সংখ্যক কোড দৈবচয়নিকভাবে তৈরি হচ্ছে তাই এদের কোডের একটা অংশের সাথে ন্নিমশ্রেণীর প্রতিনিধি ভাইরাসের সরল কোডের পুরোটার হুবহু মিল থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। একইভাবে উচ্চশ্রেণীর জীবদের DNA-এর ভেতরে A,G,C,T একটা লম্বা বিন্যাস থাকে বিধায় এদের পস্পরের মধ্যে অনেক অনেক যায়গায় মিল থাকবে এটা সহজেই বলে দেয়া যায়। এ সিম্পল ব্যপারটা অনুধাবন করার জন্য নেচারের রিসার্চ পেপারের রেফারেন্স প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ সহজ জিনিসটি বোঝানোর জন্য বিজ্ঞানযাত্রার লেখক, উচ্চ শ্রেণীর জীব মানুষ আর সিম্পাঞ্জির মধ্যকার হিমগ্লোবিন এর β-chainয়ের সাদৃশ্য ,Vit-C কেন তৈরি হয় না, মেডিকেলীয় ভাষায় ইত্যাদি মিলের ফিরিস্তি দিলেন। মনে হচ্ছে,এ সকল ভারী তথ্য হাজির করে সাধারণ মানুষের কাছে একটা বৈজ্ঞানিক-বৈজ্ঞানিক ভাব ধরতে চাইলেন! মানুষের সাথে সিম্পাঞ্জির মধ্যকার কিছুজিনে (রেন্ডম বিন্যাশের ফলে) মিল থাকলেও তাতে কিচ্ছু আসে-যায় না। কারণ, জিন একই হলেও ভিন্ন ভিন্ন প্রাণিতে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের প্রোটিন তৈরি করতে পারে যাদের অ্যান্টিজেনিক প্রপার্টি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে । কারণ উচ্চতর জীবে সরাসরি DNA নয় বরং DNA বেচারা RNA-তে পরিবর্তিত হয়ে প্রোটিন তৈরি করে। একই DNA ভিন্ন ভিন্ন কোষীয় পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের RNA-তে কনভার্ট হতে পারে। আর এই RNA-র উপর নির্ভর করবে যে কোন্‌ ধরনের প্রোটিন তৈরি হবে। সুতরাং শুধু জিন নিয়ে লাফালাফি করলে চলবে না প্রাকটিক্যাল ফীল্ডে জিন থেকে ঠিক কী ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় সেটাই মুখ্য জিনিস। এ পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলে Central Dogma of Life. বোঝাই যাচ্ছে জেনেটিক্সের জ-টা না জেনেও বিজ্ঞানযাত্রার ওই লেখক বিবর্তন ব্যখ্যা করে ফেললেন!

সহজ ভাষায়,আগেই বলেছি উচ্চশ্রেণীর জীবের DNA-এর অন্তস্থ অসংখ্য কোডেসমূহের একটা অংশের সাথে কালতালীয়ভাবে নিম্নশ্রেণীর প্রতিনিধি ভাইরাসের সরল কোডের পুরুটার হুবহু মিল থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। সেক্ষেত্রে উচ্চশ্রেণীর জীবের DNA-এর অন্তস্থ ঐ বিশেষ কোডগ্রুপটি (জিন)জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে কেটে আলাদা করে নতুন ভাইরাস বানিয়ে ফেলাটাও অসম্ভব কিছু নয়। এমন কী DNA-এর অন্তস্থ কোডগ্রুপসমূহকে ভেঙে পছন্দমত জোড়াতালি (Ligation) দিয়ে নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করে ফেলাও খুবই সম্ভব।জীবাণুবোমার ব্যপারটা তো এটাই! তবে মনে হচ্ছে এ কাজগুলার ব্যপারে এখনও খোঁজ পান নি বিজ্ঞানযাত্রার লেখকেরা!!! আর তাই ফ্রান্সে কে কোথায় বসে উচ্চতর জীবের জিনোম হতে একটা ফিনিক্স ভাইরাস তৈরি করলো সেটাই চোখ গোল করে, মুখ হা করে, গলা ফাটিয়ে বলতে এলেন, যদিও এ আবিষ্কার এটা প্রমাণ করে না যে জিনের এই কপিটা ভাইরাস থেকে মানবদেহে এসেছে । এটা কেন যে ভাইরাসের Inheritance নয় সেটা আগেই প্রমাণ করে দেখিয়েছি। তবুও বিজ্ঞানযাত্রার লেখকেরা, বল্টুর তেলাপোকার পায়ের সাথে উহার শ্রবণশক্তির সম্পর্ক তত্ত্বের মত, নতুন নতুন হাস্যকর ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হবেন। 

Junk DNA নিয়ে বিজ্ঞের মত অনেক তথ্যই দিলেন। এক ফাঁকে মুখ ফসকে বলেও দিলেন -এই Junk DNA-এর অন্যতম কাজ নাকি বিবর্তনে সাহায্য করা! তার এ কথা যে সঠিক সেটার স্বপক্ষে নেচার সময়িকীর রেফারেন্সও দিলেন। যদিও এটা ছিল একটা রিভিউ পেপার। কিন্তু বিজ্ঞানযাত্রার লেখক বুক ফুলিয়ে এমন কনফিডেনসের সাথে তথ্যটা দিলেন যাতে করে মনে হচ্ছে ওই গবেষক তা Experimentally Prove করে দেখিয়েছেন। সত্য হল ওই গবেষক কিছু তথ্য-উপাত্ত দেখে একটা অনুমিত ধারণা দিয়েছেন মাত্র। যার কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ তিনি দিতে পারেন নি। 

বিজ্ঞানযাত্রার এই সমস্ত লেখকেরা Embryology-র E-টাও জানেন কিনা সন্দেহ আছে। তা না হলে Junk DNA বিবর্তনে অন্যতম(!) ভূমিকা রাখে এটা বলতে গিয়ে দুয়েকবার ভাবতে হত তাকে, অন্তত এত কনফিডেন্স নিয়ে বলতেন না । মানব ভ্রূণ সৃষ্টির শুরুতে একটিমাত্র কোষ, হ্যাঁ একটি মাত্র কোষই থাকে। সেই কোষের ভেতরে আস্ত DNA থাকে (আস্ত শব্ধটা উনার প্রিয়)। এখন সেই কোষটা বিভাজিত হয়ে দুটি, 4টি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়লো। এখন কোন কোষটি বিকশিত হয়ে চোখ হবে, কোনটি থেকে একটা হাত হবে সেটা নির্ধারন করা একেবারেই অসম্ভব। কারণ যদি কোনও ভাবে এই চারটি কোষকে পরস্পর থেকে আলাদা করে সেট করে দেয়া যায় তবে এদের প্রত্যেকটি থেকেই একেকটা মানব তৈরি হতে পারে। জমজ বা Identical Twin সৃষ্টির ব্যাপার আসলে এটাই।

ভ্রূণ বিকাশের (Embryo Development) সময় সাইটোপ্লাজমের হ্রাসবৃদ্ধির ফলে কোষস্থ জিনগুলোর কেউ কেউ ফাংশনে আসে আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় থাকে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে এক্সপোজারের ফলে জিনগুলো Switch On/Switch Off প্রক্রিয়ায় একটা ডাইনামিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানবের সৃষ্টি করে। পূর্ণাঙ্গ মানবে যে জিনগুলো ফাংশনাল সেগুলোতো ওই এককোষী ভ্রূনেও ছিল। তাহলে উক্ত জিনগুলো ভ্রূনের মধ্যে ফাংশনাল থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষের মত অসংখ্য প্রকারের হরমোন বা অসংখ্য প্রকারের প্রোটিন তৈরি করতে পারল না কেন? কারণ জিনগুলো ফাংশনাল থাকার মত কোষীয় পরিবেশ (Cellular Environment) পায় নি। মানে Switch Off ছিল। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ মানবে কার্যকরী (Full Functioning) যে সকল জিন সমূহ ভ্রূনে Switched Off ছিল, ভ্রূনের সাপেক্ষে সেগুলোকে Junk DNA বলে চালানো যায়। ঠিক তেমনি ভাবে যে জিনগুলো ভ্রূণ বিকাশে ভূমিকা রেখেছিল পূর্ণাঙ্গ মানবদেহে পরিবর্তিত কোষীয় পরিবেশে Exposed হবার ফলে ওদের ফাংশনও Switched Off হয়ে যায় বা যদিও কিছু ফাংশন থাকে তা একেবারেই সীমিত। 

যদিও ভ্রূণ বিকাশের সময় আমরা শুধু বাহ্যিক পরিবর্তনগুলোই পর্যবেক্ষন করে আসছি কিন্তু অত্যন্ত ডাইনামিক এ পরিবর্তনের কোন পর্যায়ে কোন জিনটি Switch On হয়ে ভ্রূণ বিকাশ ঘটাচ্ছে সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার। সে গবেষনার ফল হাতে না পেয়েই বিবর্তনবাদীরা অন্ধের মত বলে বেড়াচ্ছে যে Junk DNA নাকি বিবর্তনে অন্যতম(!) ভূমিকা রাখে!!! তাহলে ভ্রূনের বিকাশের সময় কে ভূমিকা রাখে??!! জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যমে Junk DNA ফেলে দিয়ে একটি ভ্রূনের বিকাশ হয় কিনা সেটা তো অন্ততঃ পরীক্ষা করে দেখা যায়। বিবর্তনবাদীরা এক্ষেত্রে মহাবিজ্ঞানী বল্টুকেও হার মানাল। বল্টু অন্তত তেলাপোকার পা ছিড়ে একটা তত্ত্ব দিয়েছিলো কিন্তু বিবর্তনবাদীরা ভ্রূণ বিকাশে Junk DNA নিয়ে কোনরূপ যৌক্তিক পরীক্ষা-প্রমাণ না করেই দুয়েকটা তথ্য-উপাত্ত ঘেটে আন্দাজে বলতে শুরু করল এগুলা নাকি বিবর্তনে ভূমিকা রাখে! এরকম অন্ধ আন্দাজ দিয়ে আর কত দিন বিবর্তনবাদ চালাবেন? বিজ্ঞানের সৌন্দর্যই হচ্ছে পরীক্ষামূলক প্রমাণ। অনেক তো আন্দাজে ঢিল মারলেন এবার পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ধারায় ফিরে এসে, প্রমাণ দিতে পারেন আর নাই-বা পারেন, অন্ততঃ তাতে করে যদি আন্দাজ-বিজ্ঞান বাদ দিয়ে সত্যিকারের বিজ্ঞানমনষ্ক হতে পারেন সেও আমাদের জন্য ভাল। তখন অন্তত আপনাদের আজগুবি তত্ত্বের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে যাবে আর আমরাদেরকেও অযথা সময় নষ্ট করে সেগুলোর ভুল শুদ্ধ নিরূপণ করতে হবে না। 

আগেই দেখিয়েছি, বিবর্তনের Step Up ও Step Down Process-এর ফলে সার্বিকভাবে খুব কাছাকাছি মিলের কম উন্নত ও বেশি উন্নত জীবের মধ্যে, কম-উন্নত জীবটি বেশি উন্নত জীবের পূর্বপুরুষ হবে, নাকি বেশি-উন্নত জীবটি কম-উন্নত জীবটির পূর্বপুরুষ হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তবুও বিবর্তনবাদীরা বাহ্যিক আকৃতি দেখেই "আস্ত একটা Tiktaalik"-কে পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের মাঝে বসিয়ে দিয়ে বিবর্তনের ক্রম ঠিক করে ফেললেন! অধিকন্তু, শুধু গাঠনিক আকৃতি বা ফাংশন কাছাকাছি হলেই একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে এমন দাবি, জিন আবিষ্কার হবার পরেও কীভাবে করা যায়! অক্টোপাস ও মানুষের চোখের ফাংশন খুবই কাছাকাছি। ফলে অক্টোপাস যদি একটি বিলুপ্ত প্রাণী হত এবং বিবর্তনবাদীরা যদি কোনক্রমে শিলাস্তরের ভেতর "আস্ত" একটি অক্টোপাসের চোখ খুজে পেত- তাহলে বিবর্তন দুনিয়ার বাসিন্দারা, কীভাবে আদিজীব হতে ধাপে ধাপে অক্টোপাস হয়ে মানুষ নিজের চোখটি পেল সেটা নিয়ে এক যুগান্তকারী তত্ত্ব হাজির করত। কিন্তু ব্যপার হল ফাংশন কাছাকাছি হলেও উভয়ের চোখ Genetically সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ ফিনোটাইপ একই রকমের হলেও জিনোটাইপ আলাদা! তাহলে সিদ্ধান্ত হল, অক্টোপাসের চোখ হতে মানুষের চোখ আসে নি। সুতরাং কোনো ফসিলকে দুটি জীবের মাঝে মিসিং লিঙ্ক হিসেবে সেট করতে হলে এদের বাহ্যিক আকার আকৃতির পাশাপাশি জিনোমিক লেভেলের ব্যপারটাও বিবেচনায় আনতে হবে। ফসিলের আবিষ্কারকেরা কার্বন টেস্ট করে বয়স নির্ধারন ছাড়া সেটির জিনোমিক লেবেলে কখনও হাত দেন নি বা পারেন নি! মাটি খুঁড়ে একটা কিছু পেয়ে জিনফ্যাক্ট বিবেচনা না করেই চেহারার একটু মিল দেখে আর বাকিটা অনুমান করে দুটি জীবের মাঝে বসিয়ে দিয়ে মিসিং লিঙ্ক পাওয়া গেছে -এ জাতীয় দাবি অবৈজ্ঞানিক তো বটেই রীতিমত হাস্যকর। ফসিল নিয়ে Richard Dawkins নিজেও অকপটে স্বীকার করেছেন যে,
And we find many of them already in an advanced state of evolution, the very first time they appear. It is as though they were just planted there, without any evolutionary history
Source: The Blind Watchmaker, 1986, Page 229-230
যাহোক, ফসিল নিয়ে অনেক ভারী ভারী তথ্য তিনি দিলেন। এগুলো কত বছর আগের পুরোনো সেটার ভিত্তিতে ঠিক কোন যুগে স্তন্যপায়ীরা অন্য প্রজাতি থেকে সতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে আলাদা হয়ে গেল কার্বন টেস্ট করে সে হিসেবটাও সুন্দর দিয়ে দিলেন। কার্বন টেস্টের নাম যে নিলেন আদতে উনি এই টেস্টটার কতটা বোঝেন? যে অস্থায়ী (মানে তেজস্ক্রিয়) কার্বন আইসোটোপের অর্ধায়ু (সহজ ভাষায় ক্ষয়িষ্ণুতা) পরিমাপ করে জীবের বয়স নির্ণয় করা হয় সেটি কি জীব নিজে তৈরি করতে পারে!!! প্রকৃতি থেকেই যে এটা জীবের শরীরে আসে অন্তত এ তথ্যটা উনি হয়ত জানেন। আর কার্বনের এ অস্থায়ী আইসোটোপ যে পৃথিবীপৃষ্ঠের সব অঞ্চলে সমসত্ব ভাবে বণ্টিত নয় এ তথ্যটা উনাকে দিলাম। ফলাফল দাঁড়ালো বাংলাদেশী বিজ্ঞানযাত্রার লেখকদের শরীরে অস্থায়ী কার্বন আইসোটোপের পরিমান আর আফ্রিকার কারো শরীরে সেটির আনুপাতিক হার কখনোই এক হবে না। ফলে একই সময়ে বসবাস করা সত্ত্বেও একজনের শরীরে অস্থায়ী কার্বনের অর্ধায়ু অপরজনের শরীরের অস্থায়ী কার্বনের অর্ধায়ুর সমান হবে না। আরও সহজভাবে বলি, ধরুন একটা দ্বীপের উপরের স্তরের মাটি শুধু Neanderthal দের ফসিল দিয়ে তৈরি। ধরে নেই দৈবক্রমে বিজ্ঞানযাত্রার ঐ লেখকের জন্ম বেড়ে উঠা ঐ দ্বীপেই হল এবং হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বাংলাদেশে চিকিৎসা করাতে এসে একসময় মারা গেল। এখন আমি যদি তার ডেডবডির কার্বন টেস্ট করতে যাই স্বভাবতই কার্বন টেস্ট আমাকে দেখাবে যে সে Neanderthal যুগের মানব!!! কারণ অস্থায়ী কার্বন আইসোটোপগুলো পরিবেশ থেকেই তার শরীরে এসেছে! তখন তার ডেডবডির কবরে নয়, জাতীয় যাদুঘরে স্থান পাবে! যাহোক, কার্বন টেস্ট বয়সের একটা সম্যক ধারণা দেয় মাত্র, সঙ্গত কারণেই কখনোই নিশ্চিত ধারণা দিতে পারে না। 

এবার আসুন দেখি,Organogenesis বা সহজভাষায় বলতে গেলে অঙ্গ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এ ব্যপারে বিবর্তন কী বলে । বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী মেনে নিলাম DNA-র গাঠনিক কাঠামোয় রেন্ডম প্রসেসে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে টিস্যুর অপরিকল্পিত বৃদ্ধিতে অনির্দিষ্ট Shape বা আকৃতির জীব তৈরি হওয়া খুবই সম্ভব। কিন্তু রেন্ডম প্রসেসে এ বিবর্তন চলতে চলতে একটা সময় এসে নতুন একটা সুনির্দিষ্ট ফাংশনাল অর্গান (যেমন চোখ ) তৈরি সম্ভব কী ?কারণ ‘একটা Targeted Organ তৈরি করতে হবে’-এরকম কোন নির্দিষ্ট দিকে লক্ষ্য রেখে বিবর্তন চলতে পারে না। বিবর্তন হলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেহীন (Non-targeted) ও স্বতঃষ্ফুর্ত (Spontaneous) একটা প্রক্রিয়া। আর প্রবাবিলিটি থিওরির আলোকে হিসেব করতে গেলে এরকম সুনির্দিষ্ট ফাংশনাল অর্গান (যেমন চোখ ) তৈরি অসম্ভব। 

সর্বশেষ শেষ কথা হল বিবর্তনবাদ যতটা না পরীক্ষামূলক তার চেয়ে অনেকবেশি ফিলোসফিক্যাল . "এরকম হতে পারে" বা "ঐরকম ভাবে হতে পারে ", "হয়ত"- এইসব আন্দাজনির্ভর ধারণাগুলো দিয়ে বিজ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায় (Hypothesis) শুরু হয় সত্যি, কিন্তু সেটা বিজ্ঞান হিসেবে গৃহীত হতে হলে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের মানদন্ডে উত্তীর্ণ হওয়া অবশ্যক। বিবর্তনবাদ সেটা করতে শুধু চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েই ক্ষান্ত হয় নি বরং প্রচলিত পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে গিয়ে ফিলোসফির আশ্রয়ে একটা নতুন ঘরানার Junk-Science প্রবর্তন করতে চাইছে। আর সেটাকেই বিজ্ঞানযাত্রার লেখকেরা মহাসমারোহে নিখাঁদ(!) বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলে প্রচার করে চলছে ঠিক যেভাবে ইদানিংকালে ফুটপাতের কবিরাজেরাও হাতের নক্সা দেখে ভবিষ্যত নির্ণয়ের কাজটি বৈজ্ঞানিকভাবে(!) করেন বলে দাবি করেন। 
Please, just stop polluting Science.
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ